শরীরে কিডনির প্রধান কাজ হল রক্তের পরিশোধন করা। যখন অসুখের কারণে কিডনিযুগল তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না এবং কিডনির কর্মক্ষমতা কম হয়ে যায়, এই অবস্থাকেই কিডনি ফেলিওর বলে।
কিডনি ফেলিওরের নির্ণয় কীভাবে করা হয়?
রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রার পরীক্ষার দ্বারা কিডনির কার্যক্ষমতা জানা যায়। সাধারণত কিডনির কার্যক্ষমতা শরীরের প্রয়োজনের থেকে বেশি হয়। সেজন্য কিডনির অল্প স্বল্প ক্ষতি হলেও, রক্তের পরিশোধনের কোনও ত্রুটি দেখা যায় না। কিন্তু যখন দুটি কিডনিরই কার্যক্ষমতা ৬০ শতাংশেরও বেশি কমে যায় তখন রক্তে, ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রা সাধারণের থেকে বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়।
একটিমাত্র কিডনি খারাপ হলে কি কিডনি ফেলিওর হতে পারে?
না, যদি কোনও মানুষের দুটি সুস্থ কিডনির মধ্যে একটি খারাপ হয়ে যায় বা শরীর থেকে কোনও কারণে কেটে বাদ দেওয়া হয় তাহলে দ্বিতীয় সুস্থ কিডনি নিজের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধির দ্বারা শরীরের রক্ত পরিবেশন এবং অন্যান্য কাজ সম্পূর্ণরূপে করতে পারে।
কিডনি ফেলিওরের প্রধান দুটি প্রকার হল:
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর আর ক্রনিক কিডনি ফেলিওর, এই দুই প্রকার কিডনি ফেলিওরের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টরূপে জানা দরকার।
দুটি কিডনি খারাপ হবার পরেই কিডনি ফেলিওর হয়
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের ক্ষেত্রে, স্বাভাবিক কার্যরত কিডনি বিভিন্ন রোগের কারণে ক্ষতির ফলে হঠাৎ করে কাজ কম বা বন্ধ করে দেয়।
যদি এই রোগের তাড়াতাড়ি সঠিক চিকিৎসা করা যায়, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই কিডনি পুনরায় সম্পূর্ণরূপে কাজ করতে শুরু করে এবং পরে রোগীর ওষুধ বা চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরের সমস্ত রোগীর চিকিৎসা ঔষধপথ্যের দ্বারা করা হয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অল্প সময়ের জন্য ডায়ালিসিসের দরকার হয়।
ক্রনিক কিডনি ফেলিওর
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) এর ক্ষেত্রে অনেক প্রকার রোগের কারণে, কিডনির কার্যক্ষমতা ক্রমশ বেশ কয়েক মাস বা বছর ধরে ধীরে ধীরে কম হতে থাকে বা শেষ হয়ে যায়। বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্রনিক কিডনি ফেলিওরকে ঠিক বা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করার কোনও ওষুধ নেই।
ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের সমস্ত রোগীর চিকিৎসা ওষুধ, পথ্য এবং নিয়মিত পরীক্ষার দ্বারা করা হয়ে থাকে। শুরুতে চিকিৎসার লক্ষ হল ক্ষতিগ্রস্ত কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখা, কিডনি ফেলিওরের লক্ষণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা, এবং ভবিষ্যতে ক্ষতির থেকে বাঁচানো। এই চিকিৎসার আরও একটি উদ্দেশ্য হল, রোগীর স্বাস্থ্যকে সন্তোষজনক রেখে, ডায়ালিসিস-এ আসার অবস্থাকে যথাসম্ভব দূরে ঠেলা। কিডনি অধিক খারাপ হলে, সঠিক চিকিৎসার পরেও রোগের লক্ষণ বাড়তে থাকে এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রা অধিক বেড়ে যায়, এইরকম রোগীদের ক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প ডায়ালিসিস এবং কিডনি প্রতিস্থাপন। প্রসাবে প্রোটিনের বেশি মাত্রা, অতিরিক্ত ইউরিক আসিড, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ফসফেট এর মাত্র নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি দ্বারা ক্রনিক কিডনি ফেলিওর নিয়ন্ত্রণ হয়।
যখন কিডনিযুগল ৬০ শতাংশের অধিক খারাপ হয়ে থাকে তখনই কিডনি ফেলিওরের নির্ণয় সম্ভব।