কিডনির রোগগুলিকে প্রধানত দূভাগে বিভক্ত করা যায়:
- মেডিক্যাল রোগ (ঔষধ সম্পর্কিত): এই প্রকার রোগের চিকিৎসা নেফ্রোলজিস্ট ঔষধের দ্বারা করে থাকেন। কিডনি বিকল রোগীদের ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের দরকার হতে পারে।
- সার্জিক্যাল রোগ (অপারেশন সম্পর্কিত): এই প্রকার রোগের চিকিৎসা ইউরোলজিস্ট করে থাকেন। এক্ষেত্রে, সাধারণ অপারেশন, দূরবিন দ্বারা পরীক্ষা-এন্ডোস্কোপি, বা লেজারের দ্বারা পাথর ভাঙা- লিথোট্রিপসি ইত্যাদির প্রয়োগ করা হয়।
- নেফ্রোলজিস্ট ও ইউরোলজিস্টের মধ্যে পার্থক্য কী? কিডনি বিশেষজ্ঞ ফিজিশিয়ানকে নেফ্রোলজিস্ট বলে, যিনি ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা এবং ডায়ালিসিস দ্বারা রক্ত পরিশোধন করেন। আর, কিডনি বিশেষজ্ঞ সার্জেনকে ইউরোলজিস্ট বলে। যিনি সাধারণত অপারেশন এবং দূরবিন এর মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করেন।
কিডনির প্রধান রোগ |
মেডিক্যাল রোগ |
সার্জিক্যাল রোগ |
কিডনি ফেলিওর |
মূত্রনালিকাতে পাথর |
উচ্চ রক্তচাপ |
প্রস্টেটের রোগ |
ডায়াবেটিস থেকে কিডনির অসুখ |
মূত্রনালিকাতে জন্মগত অসুখ |
নেফ্রোটিক সিনড্রোম |
মূত্রনালিকার/ফিউনির ক্যান্সার |
প্রস্রাবের সংক্রমণ রোগ |
কিডনি প্রতিস্থাপন |
প্রস্টেটের রোগ SLE এবং অন্যান্য নেফ্রাইটিস ৯০% ঔষধের দ্বারা চিকিৎসা সম্ভব
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওরে কিডনিযুগল হঠাৎ খারাপ হয়, কিন্তু চিকিৎসার পরে পুরোপুরি ঠিক হয়ে যায়।
কিডনি ফেলিওর
কিডনি ফেলিওর এর অর্থ হল, কিডনিযুগলের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া। রক্তে ক্রিয়েটিনিন আর ইউরিয়ার বর্ধিত মাত্রা কিডনি ফেলিওরের সংকেত দেয়। কিডনি ফেলিওর দুইপ্রকারের হয়-১. অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর, ২. ক্রনিক কিডনি ফেলিওর।
- অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর (Acute Kidney Injury/Failure):
অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর-এর অর্থ হল স্বাভাবিক কার্যরত কিডনি অল্প সময়ের মধ্যে, হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। অ্যাকিউট কিডনি ফেলিওর হবার মূল কারণ বমি-পায়খানা, ম্যালেরিয়া, রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যাওয়া ইত্যাদি। সঠিক ওষুধ এবং দরকার হলে ডায়ালিসিসের মাধ্যমে এইভাবে খারাপ হওয়া কিডনি পুনরায় ঠিকভাবে কাজ করতে শুরু করে।
- ক্রনিক কিডনি ফেলিওর:
ক্রনিক কিডনি ফেলিওর (Chronic Kidney Disease, CKD) এ কিডনিযুগল ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময় ধরে এমনভাবে খারাপ হয় যে, পুনরায় ঠিক হয় না। শরীরে ফোলা ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, বিরক্তিভাব, দুর্বলতা, অল্প বয়সে উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি এই রোগের মুখ্য লক্ষণ। ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের মুখ্য কারণগুলি হল, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির অন্যান্য নানাবিধ রোগ। রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রার দ্বারা কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝা যায়। কিডনি বেশি খারাপ হলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রা বাড়ে। এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা ঔষধ আর খাদ্য এবং পানীয়ের উপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে করা হয়। এই চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল কিডনিকে অধিক খারাপ হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো এবং ওষুধের মাধ্যমে রোগীর স্বাস্থ্য দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঠিক রাখা।
কিডনি বেশি খারাপ হলে সাধারণত, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৮-১০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার-এর বেশি হয়, তখন ঔষধ এবং খাদ্য-পানীয়তে নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও রোগীর স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। এমত অবস্থায় চিকিৎসার কেবলমাত্র দুটি বিকল্প খোলা থাকে। ডায়ালিসিস (রক্তের ডায়ালিসিস বা পেটের মধ্যে ডায়ালিসিস) অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন।
ক্রনিক কিডনি ফেলিওরে কিডনিযুগল ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময় ধরে এমনভাবে খারাপ হয় যে, পুনরায় আর ঠিক হয় না