Read Online in Bangla
Table of Content
ভূমিকা এবং সূচীপত্র্র
সাধারণ তথ্য
কিডনি ফেলিউর
কিডনির অনান্য মুখ্য রোগ
কিডনি রোগের মধ্যে পথ্য

4 কিডনির রোগের নির্ণয়

কিডনির অনেক রোগ-চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। জটিল কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। দুর্ভাগ্যবশত অনেক গম্ভীর কিডনির রোগের লক্ষণ শুরুতে কম দেখা যায়। এইজন্য যখনই কিডনির রোগের আশঙ্কা হয়, তখনই বিনা বিলম্বে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করে নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করা দরকার।

কিডনির পরীক্ষা কাদের করানোর দরকার? কিডনির রোগের সম্ভাবনা অধিক কখন?

  • যে ব্যক্তির কিডনির রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
  • ডায়াবিটস (মধুমেহ) রোগগ্রস্ত ব্যক্তি।
  • উচ্চ-রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তি (High Blood Pressure)
  • পরিবারে বংশানুগতিক কিডনি রোগের ইতিহাস।
  • অনেক দিন ধরে যন্ত্রণা নিবারক (Pain Killer Tablets) ঔষধের সেবন।
  • রেচনতন্ত্রে জন্মগত রোগ।
  • ২-৫ বৎসর অন্তর নিয়মিত পরীক্ষা সাধারণের জন্য দরকার।
প্রস্রাবের পরীক্ষা কিডনির রোগের প্রাথমিক নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি

কিডনির রোগের নির্ণয়ের জন্য আবশ্যক পরীক্ষাগুলি হল:

১. প্রস্রাবের পরীক্ষা:

কিডনি রোগের নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রস্রাব পরীক্ষা অতি প্রয়োজনীয়-

  • প্রস্রাবের পুঁজের (Pus) উপস্থিতি মূত্রনালিতে সংক্রমণের নিদর্শন।
  • প্রস্রাবের প্রোটিন বা রক্তকণিকার উপস্থিতি গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস এর নিদর্শন।
  • মাইক্রোঅ্যালবুমিনেবিয়া: প্রস্রাবের এই পরীক্ষাটি ডায়াবিটিসের কারণে কিডনি খারাপ হবার সম্ভাবনা থেকে সর্বপ্রথম এবং সবথেকে তাড়াতাড়ি নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
  • প্রস্রাবের অন্য পরীক্ষাগুলি হল:
      প্রস্রাবের টি.বি.র জীবাণুর (Bacteria) পরীক্ষা টি.বি. নির্ণয়ের জন্য।
      ২৪ ঘণ্টার মূত্রে প্রোটিনের মাত্রা (কিডনির ফোলাভাব আর তার চিকিৎসার প্রভাব জানার জন্য)
      প্রস্রাব কালচার আর সেনসিটিভিটি পরীক্ষা (প্রস্রাব সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাকটিরিয়া বিষয়ে জানতে আর তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যাপারে জানতে)
  • প্রস্রাবের পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির বিভিন্ন রোগের ব্যাপার জানা যায় কিন্তু প্রস্রাব পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক (Normal) হওয়া সত্ত্বেও কিডনিতে কোনও রোগ নেই সেটা বলা যায় না।

২. রক্তের পরীক্ষা নিরীক্ষা:

  • রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা: রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি (রক্তাল্পতা অ্যানিমিয়া) কিডনি ফেল হবার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
    রক্তাল্পতা শরীরের অন্য কোনও রোগের নিদর্শনও হতে পারে সেজন্য এই পরীক্ষা সর্বদা কিডনির রোগের জন্যই করা হয় এমন নয়।
  • রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রা: এই পরীক্ষা কিডনির কার্যদক্ষতার পরীক্ষা। ক্রিয়েটিনিন আর ইউরিয়া হল শরীরের অনাবশ্যক বর্জ্য পদার্থ, যা কিডনির দ্বারা শরীরের বাইরে নিষ্কাশিত হয়। শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর সাধারাণ মাত্রা ০.৬ থেকে ১.৪ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার আর ইউরিয়ার সাধারণ মাত্রা ২০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। কিডনিযুগল বিকল হলে দুটিরই মাত্রা বাড়ে। এই পরীক্ষাটিও কিডনি রোগের নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • রক্তের অন্যান্য পরীক্ষা: কিডনির বিভিন্ন রোগের নির্ণয়ের জন্য রক্তের অন্যান্য পরীক্ষাগুলি হল কোলেস্ট্রোল, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফেটস, কমপ্লিমেন্টস ইত্যাদি।
কিডনির কার্যক্ষমতা জানার জন্য রক্তের ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিন এর পরীক্ষা করানো দরকার

৩. রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা:

  • কিডনির সোনোগ্রাফি: এটি একটি সরল, সুরক্ষিত, শীঘ্র পদ্ধতি যার দ্বারা কিডনির আকার, অবস্থান, মূত্রমার্গের অবরোধ, পাথর (Stone) ইত্যাদি ব্যাপারে জানা যায়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ক্রনিক কিডনি ফেলিওর-হলে রোগীর কিডনির সংকোচন এই পরীক্ষার দ্বারা বোঝা যায়(কিডনির Size ছোট হয়ে যায়)।
  • পেটের এক্স-রে: এই পরীক্ষা মুখ্যত কিডনির স্টোন নির্ণয়ের জন্য করা হয়।
  • ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাফি (আই.ভি.পি): এই পরীক্ষাতে রোগীকে এক বিশেষ ধরনের আয়োডিনযুক্ত (রেডিও কনট্রাস্ট পদার্থ) ঔষধের ইনজেকশন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দেবার পরে অল্প অল্প সময়ের অন্তরালে পেটের (X-Ray) নেওয়া হয়।
    এই (X-Ray) তে ঔষধ কিডনির মধ্য দিয়ে মূত্রনালিকা দ্বারা মূত্রাশয়ে জমা হতে দেখা যায়।
    আই.ভি.পির দ্বারা কিডনির কার্যক্ষমতা আর মূত্রনালিকার অবস্থানে ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়। এই পরীক্ষা বিশেষ করে স্টোন, মূত্রনালিতে অবরোধ (obstacle) গাঁট-এর নির্ণয় করা যায়। যখন কিডনি খারাপ হবার পরে কম কাজ করে তখন এই পরীক্ষা কার্যকরী হয় না। রেডিও কনট্রাস্ট ইনজেকশন খারাপ কিডনিকে আরও খারাপ করতে পারে। এই কারণে কিডনি বিকল রোগীদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা ক্ষতিকারক হতে পারে। আই.ভি.পি একটি X-Ray পরীক্ষা হবার কারণ, গর্ভাবস্থায় থাকা বাচ্চার জন্য হানিকারক হতে পারে। সেজন্য গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করা হয় না।
  • অন্য রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা : কিছু বিশেষ প্রকার কিডনির রোগের জন্য ডপলার, মিক্সইউরেটিং সিস্টোইরেথ্রোগ্রাম রেডিও নিউক্লিয়ার স্টাডি, রেনাল অ্যানজিওগ্রাফি, সি. টি. স্ক্যান, অ্যানটিগ্রেড আর রেট্রোগ্রেড পাইলোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষার দ্বারা নির্ণয় করা হয়।
  • ৪. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা: কিডনি বায়োপসি, দূরবিন দ্বারা মূত্রনালিকার পরীক্ষা, এবং ইউরোডাইনামিক্সের মতো বিশেষ প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিডনির অনেক প্রকার রোগের নির্ণয়ের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।
কিডনির সোনোগ্রাফির পরীক্ষা কিডনির রোগবিশেষজ্ঞর কাছে তৃতীয় চোখের কাজ করে

কিডনির বায়োপসি (Kidney Biopsy)

কিডনির বায়োপসি পাতলা সুচ দ্বারা, বিনা সংজ্ঞাহীন করে করা হয়। কিডনির অনেক রোগের কারণ জানতে এই পরীক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষা যন্ত্রণারহিত।

কিডনির বায়োপসি কী?

কিডনির অনেক রোগের কারণ জানতে, সুচের মাধ্যমে কিডনির মধ্য থেকে পাতলা সুতোর মতো অংশ বের করে, তার বিশেষ প্রকার হিস্টোপ্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষাকে কিডনির বায়োপসি বলে।

কিডনির বায়োপসির প্রয়োজন কখন হয়?

প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি, কিডনি বিকল হওয়ার ফলে কিডনির রোগীদের সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও নিশ্চিত রোগ নির্ণয় না হলে, কিডনির বায়োপসি প্রয়োজনীয় হয়।

কিডনির বায়োপসির লাভ কী?

এই পরীক্ষা দ্বারা কিডনির রোগের সঠিক কারণ জানার পর তার চিকিৎসা সম্ভব হয়। এই পরীক্ষার দ্বারা কী ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন, চিকিৎসা কতটা লাভদায়ক হবে অথবা ভবিষ্যতে কিডনির খারাপ হবার সম্ভাবনা কী প্রকার, তা জানা যায়।

কিডনির অনেক প্রকার রোগ নির্ণয়ের জন্য কিডনির বায়োপসি অতিআবশ্যক পরীক্ষা

কিডনির বায়োপসি কীভাবে করা হয়?

কিডনির বায়োপসি করার জন্য রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

  • কিডনির বেশ কিছু রোগে প্রস্রাবে প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি কিডনি ফেলের মতো গম্ভীর রোগের প্রাথমিক নিদর্শন। উদাহরণস্বরূপ, ডায়াবিটিসের রোগের কারণে কিডনির ফেল হবার প্রাথমিক অবস্থায় প্রস্রাবে প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • এই পরীক্ষা সুরক্ষিতভাবে করার জন্য রক্তচাপ এবং রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হওয়া দরকার।
  • রক্ত পাতলা করার ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন ইত্যাদি, পরীক্ষা করার দু-সপ্তাহ পূর্বে বন্ধ করা দরকার।
  • এই পরীক্ষা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সংজ্ঞাহীন (Unconcious) না করে এবং বাচ্চাদের সংজ্ঞাহীন করার পরে করা হয়।
  • বায়োপসি করার সময় রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে পেটের নীচে বালিশ রাখা হয়।
  • বায়োপসি করার জন্য নিশ্চিত জায়গা সোনোগ্রাফির দ্বারা ঠিক করা হয়। কোমরে ঠিক পিঠের পাঁজরের নীচে স্নায়ুতন্ত্রের পাশের জায়গা হল বায়োপসির উপযুক্ত জায়গা।
  • বিশেষ প্রকার সুচের দ্বারা (বায়োপসি নিডল) কিডনির থেকে পাতলা সুতোর মতো ২-৩ টি টুকরো বের করে হিস্টোপ্যাথোলজি পরীক্ষার জন্য হিস্টোপ্যাথোলজিস্টের কাছে পাঠানো হয়।
  • বায়োপসি করার পরে রোগীকে খাটের উপর বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বেশিরভাগ রোগীকে দ্বিতীয় দিন ছেড়ে দেওয়া হয়।
  • বায়োপসি করার পর ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীদের বেশি পরিশ্রমের কাজ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, বিশেষ করে ভারী বস্তু তুলতে মানা করা হয়।
  • বায়োপসি করার আগে রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা আছে কি না দেখা দরকার (prothrombin time/INR) ।
  • বায়োপসি করার পরে মূত্র পরিষ্কার থাকলে (No hematuria), রোগীকে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।
বায়োপসি শুধুমাত্র ক্যানসার-এর নির্ণয়ের জন্য করা হয়-এটা ভুল ধারণা